হিন্দু সমাজের ইয়ং জেনারেশন কেন ধর্মান্তি করন হচ্ছে ?

Nataraj Ngo
হিন্দু সমাজের ইয়ং জেনারেশন কেন ধর্মান্তি করন হচ্ছে

                                        হিন্দু সমাজের ইয়ং জেনারেশন কেন ধর্মান্তি করন হচ্ছে ?


পরম শ্রদ্ধেয় অতিথিবৃন্দ, প্রিয় শ্রোতা এবং যুব সমাজ, আজ আমরা এমন এক বিষয়ে আলোচনা করতে এখানে একত্রিত হয়েছি, যা আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সমাজের গভীরতর স্তরের সঙ্গে জড়িত। আমাদের ঐতিহ্য এবং আত্মপরিচয়ের সংরক্ষণ আজ এক গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে আমাদের যুব সমাজকে লক্ষ্য করে একটি পরিবর্তনের প্রবণতা চোখে পড়ছে—যা কোনো একটি বিশেষ ধর্মের প্রতিফলন নয়, বরং ধর্মীয় সচেতনতার অভাবের প্রতিফলন।

এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য হল গভীরভাবে উপলব্ধি করা কেন আমাদের সমাজের যুব সমাজ অন্য ধর্মে আকৃষ্ট হচ্ছে এবং কেন তারা নিজেদের মূল থেকে সরে যাচ্ছে। এর জন্য শুধু এককভাবে দায়ী করা যথেষ্ট নয় বরং বিশ্লেষণ করা দরকার যে কীভাবে আমাদের সমাজ তার মূল রূপে ফিরে আসতে পারে।

প্রথমত, ধর্মীয় শিক্ষার অভাব ও বিকৃতির প্রসঙ্গ

আমাদের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলি, বিশেষ করে বেদ, উপনিষদ, এবং বেদান্ত, জীবনের গভীর সত্যের প্রতিফলন। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত, দীর্ঘকাল ধরে আমাদের এই প্রাচীন জ্ঞানের ধারাগুলি সমাজের সামনে সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপিত হয়নি। এক এক করে বিভিন্ন পন্ডিত বা মতবাদীরা নিজেদের মতাদর্শ ঢুকিয়ে এই জ্ঞানকে বিভ্রান্ত করেছেন। ফলে, প্রাচীন জ্ঞানের ঐ পূর্ণাঙ্গতা আর বজায় থাকেনি এবং তা সাধারণ মানুষের কাছে অনেকটাই দুর্বোধ্য হয়ে পড়েছে। আজকের যুবসমাজ এই অস্পষ্টতার মধ্যে প্রাচীন জ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য বুঝতে পারছে না এবং অন্য ধারায় ঝুঁকছে।



ধর্মান্তিকরনের দলিলধর্মান্তিকরনের দলিল

                                    ধর্মান্তিকরনের দলিল

দ্বিতীয়ত, ঐক্য ও সহযোগিতার অভাব

হিন্দু সমাজে বিভিন্ন মতবাদ, পন্থা, এবং সংস্কৃতির প্রচলন রয়েছে, যা একদিকে ধনী এবং বহুমুখী সংস্কৃতির পরিচায়ক হলেও অন্যদিকে এই বিভাজন ঐক্যের অভাব তৈরি করছে। এই বিভাজন এবং নিজেদের মধ্যে ইগো বা অহংবোধের কারণে বিভিন্ন সমাজে সংঘটিত হিন্দু সংগঠনগুলির মধ্যে সম্পূর্ণ সহযোগিতা নেই। এখানে কেউ কারো মতামত বা আবেগকে সম্মান দিতে চায় না। এই বিভাজনের কারণে যুবসমাজ একক ঐক্যের অভাব অনুভব করছে এবং নিজেদের ধর্মীয় মূল্যবোধের দিকে আকৃষ্ট হতে পারছে না। এই কারণেই তারা সহজে অন্য ধর্মের প্রভাবের দিকে ঝুঁকে পড়ছে, যেখানে প্রায়ই একটি ঐক্যবদ্ধ, সংগঠিত চিত্র তুলে ধরা হয়।

রাজনৈতিক নেতাদের উদাসীন মনোভাব

এই সমাজের প্রতি রাজনৈতিক নেতাদের উদাসীন মনোভাবও আমাদের চিন্তাশীল যুব সমাজকে ভিন্ন পথে নিয়ে যেতে বাধ্য করছে। আজ আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নিজেদের স্বার্থপরায়ণতায় এতটাই মগ্ন যে তাদের মধ্যে প্রায়ই নিজেদের ধর্মের প্রতি দায়িত্ববোধ অনুভূত হয় না। যুব সমাজ যখন দেখে যে তাদের নেতারা সমাজের উন্নতির পরিবর্তে নিজেদের লাভের জন্য কাজ করছেন, তখন তারা তাদের মতাদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বর্তমান সমাজের নেতৃত্বকে যদি ঐক্যের পথে, দায়িত্ববোধের পথে আনতে না পারি, তবে এই বিভাজন আরো তীব্র হতে থাকবে এবং যুবসমাজের কাছে এটি একটি ভুল বার্তা পাঠাবে।

ধর্মান্তর এবং জাতীয় বিভাজনের চক্রান্ত

অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিভিন্ন প্রচেষ্টা আজ সমাজের মধ্যে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করতে কাজ করছে। প্রতিনিয়ত হিন্দু সমাজকে ধীরে ধীরে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টায় কিছু লোক লিপ্ত। তারা নানা প্রলোভন এবং সুযোগ দিয়ে যুব সমাজকে আকৃষ্ট করছে। এর মূল কারণটি হলো, আমাদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য নেই এবং আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রাতিষ্ঠানিক সংরক্ষণ নেই। এই বিভাজন শুধু আমাদের সমাজের ভাঙন ঘটাচ্ছে না, বরং জাতীয় ঐক্যেরও ক্ষতি করছে।

আমাদের বুঝতে হবে, যদি আমাদের সমাজ ধর্মের ভিত্তিতে পুনরায় বিভাজিত হয়, তাহলে সেই পরিস্থিতি কেবলমাত্র আমাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নয়, বরং সমগ্র জাতীয় সংহতিকেও হুমকির মুখে ফেলবে। আমরা যদি এই ভাঙন থামাতে না পারি এবং একত্রিত হতে না পারি, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের শক্তিশালী সমাজের ধারণা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।




                                                                                                 মা-বাবার কাছে শেষ আশীর্বাদ নিতে নব মুসলিম


আর্থিক লোভ এবং নেতাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ

যুবসমাজ আজ এই দেখছে যে সমাজের নেতারা নিজেদের আর্থিক স্বার্থে মগ্ন হয়ে পড়েছেন। তারা নিজেদের স্বার্থ এবং রাজনৈতিক সুবিধার জন্য নিজেদের সমাজকে রক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারছে না। অথচ সমাজের দায়িত্ব তো তাদেরই। এই দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করছে। বর্তমান যুব সমাজ অর্থ উপার্জনের দিকে বেশি মনোযোগী হয়েছে। এবং এই প্রতিযোগিতার ফলে তাদের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং পরম্পরাগত মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং ধর্মান্তরণ বিরোধী আইন

আমাদের সমাজের একটি স্থিতিশীল ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়নের প্রয়োজন। প্রথমত, আমাদের দেশে ধর্মান্তরণ বিরোধী একটি শক্তিশালী আইন প্রয়োজন। এই আইন যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তা সমাজের মধ্যে বিভাজন এবং ভিন্নধর্মে ধর্মান্তরণের প্রচেষ্টাকে সীমিত করতে সাহায্য করবে। দ্বিতীয়ত, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সঠিক আইন প্রণয়ন করা উচিত, যাতে সামাজিক সম্পদগুলো সঠিকভাবে বন্টন করা যায় এবং জাতীয় উন্নতি বজায় থাকে।

হিন্দু সমাজে শিক্ষার পুনর্গঠন এবং ঐক্য

আজ প্রয়োজন ধর্মীয় শিক্ষার পুনর্গঠন, যাতে আমাদের যুব সমাজ নিজেদের শিকড় এবং প্রাচীন ঐতিহ্যের গভীরতার দিকে ফিরে যেতে পারে। আমাদের বেদ, উপনিষদ এবং অন্যান্য প্রাচীন গ্রন্থগুলোকে সহজভাবে উপস্থাপন করতে হবে, যাতে সবাই সেই জ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে এবং নিজেদের আত্মপরিচয়ের প্রতি গর্ব অনুভব করতে পারে। এছাড়াও, হিন্দুদের নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সম্মান বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

শেষ কথা: একত্রিত হওয়ার আহ্বান

বন্ধুরা, আজ আমাদের সমাজের জন্য একত্রিত হওয়ার সময়। আমরা যদি নিজেদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাই, তবে আমাদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করতে হবে এবং নিজেদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের রাজনীতি থেকে শুরু করে সামাজিক এবং ধর্মীয় স্তরে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই একত্রিত হতে হবে। আমাদের নিজেদের ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে হবে।

আমাদের লক্ষ্য শুধু আমাদের ধর্মের পরম্পরাকে রক্ষা করা নয়, বরং একটি শক্তিশালী সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে প্রত্যেকের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সম্মান, সহমর্মিতা, এবং সহযোগিতার বোধ থাকে। আসুন আমরা সকলে মিলে একটি ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী এবং সামাজিক দায়িত্বশীল হিন্দু সমাজ গড়ে তুলি, যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর নিজেদের পরিচয় গড়ে তুলতে পারে।

ধন্যবাদ।

0 Comments